বয়ঃসন্ধিকাল পেরিয়ে কৈশোরের শুরুতে শত শত তরুণ তরুণীর সরল মনে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খায় প্রেম করা ভালো না খারাপ ? প্রেম নিয়ে গল্প , উপন্যাস কিংবা কবিতার সংখ্যা নেহাত কম নয়। রোমিও-জুলিয়েট বা লায়লা-মজনুর প্রেম কাহিনী তো আমাদের সবার জানা। প্রেম করা ভালো না খারাপ এই সম্পর্কে কেউ কেউ ইসলামিক ব্যাখ্যাও চান। আশা করি সব মিলিয়ে আজ একটা জমজমাট লেখা হবে।
প্রেম কি? প্রেম করা ভালো না খারাপ?
প্রেম একটি আত্ম্যাধিক বিষয়। আপনার হঠাৎ কাউকে ভালো লেগে যেতে পারে এবং আপনি তার প্রেমে পড়ে যেতে পারেন। আমরা ফেসবুকের প্রতি যেরকম আসক্ত ঠিক তেমনি প্রেমিক প্রেমিকারাও একে অপরের প্রতি ‘আসক্ত’ হয়ে পড়ে। কারো প্রতি মাত্রাতিরিক্ত মায়া, আবেগ ও ভালোবাসার নামই প্রেম। সাধারণত স্কুল লাইফ থেকেই প্রেমের শুরুটা হয়।
বিশেষ করে হাইস্কুল লাইফে কাউকে না কাউকে ভালো লেগেই যায় এবং এই প্রেমটা হয় খাঁটি। স্কুল লাইফের ভালো লাগার মানুষটিকে কিন্তু সহজে ভোলা যায় না। এজন্য এই সময়ে (স্কুল লাইফে) অনেকেই ভাবনায় পড়ে যায় প্রেম করা ভালো না খারাপ। কেউ অবশ্য ভাবনা চিন্তায় এক কদম এগিয়ে, তারা ভাবে একটা প্রেম না হয় করেই দেখি ! না… ভুলেও এই কাজ করবেন না । আগে পুরো লেখাটা মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মানুষ প্রেমে পড়ে কেন?
একজন মানুষের প্রেমে পড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রেম হচ্ছে একটি ‘মোহ’। এই মোহ মানুষকে কাঁকড়ার মতো আঁকড়ে ধরে। প্রেম যে শুধু স্কুল জীবনেই হয় তা নয়। প্রেম যেকোন বয়সে, যে কোন পরিস্থিতিতে হয়ে যেতে পারে। তবে কৈশোরের প্রেম আর বৃদ্ধ বয়সের প্রেমের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
প্রধানত দুটি কারণে মানুষ প্রেমে পড়ে । এক. স্বার্থহীন কারণে, এটিই প্রকৃত প্রেম। দেশপ্রেম, জীবপ্রেম, ধর্মপ্রেম ইত্যাদি স্বার্থহীন প্রেমের উদাহরণ। দুই. স্বার্থের কারণে, এই শ্রেণীর প্রেম সাধারণত বাণিজ্যিক লেনদেনের মতো হয়ে থাকে। দিলে পাবে, দেওয়া শেষ তো পাওয়াও শেষ! যেমন: কেউ পদ বা গদি লাভের আশায় ভালোবাসলে তা লাভ না হলে ভালোবাসা শেষ। করিম সাহেব তার ম্যানেজারকে খুব ভালোবাসে, যাতে তার চাকরি টিকে থাকে, প্রমোশন পায়। চাকরি শেষ হয়ে গেলে ভালোবাসাও শেষ।
অমুক তার শিক্ষককে খুব ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। যাতে সে পরীক্ষায় নম্বর বেশি পায়। পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে তার ভালোবাসাও শেষ। একজন ফুটবলার তার কোচকে খুব ভালোবাসে। যাতে সে দলে জায়গা পায়। কোচের চাকরি চলে গেলে তার ভালোবাসাও শেষ হয়ে যায়। এইভাবে কেউ শুধু রূপের জন্য ভালোবাসলে রূপ নষ্ট হয়ে গেলে তার ভালোবাসাও নষ্ট হয়ে যায়। একজন মানুষের প্রেমে পড়ার সার্বিক কারণগুলো নিচে দেওয়া হলো:
একাকিত্ব: মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ কখনো একা থাকতে পছন্দ করে না। মানুষের প্রেমে পড়ার একটি অন্যতম কারণ হলো ‘একাকিত্ব’। মানুষ একাকিত্ব দূর করতেই একজন মনের মতো সঙ্গী খুঁজে থাকে।
আবেগ: হাসি, কান্না, সুখ,শান্তি, রাগ, অভিমান ইত্যাদির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় ‘আবেগ’। আবেগ একটি মানসিক অবস্থা। একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের দীর্ঘদিনের চলাফেরা ও ভাবের আদান-প্রদানের ফলেই আবেগ সৃষ্টি হয়। অনেক মানুষ এই আবেগের কারণেই প্রেমে পড়ে।
আকর্ষণ: একজন মানুষের চেহারা, শারীরিক গঠন, উচ্চতা ও কথাবার্তায় আরেকজন মুগ্ধ হতে পারে। এছাড়া রুচি, চরিত্রের দৃঢ়তা কিংবা ব্যক্তিত্বের কারণেও একজন আরেকজনের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে । এই ভালোলাগা বা আকর্ষণের কারণেই অনেকে প্রেমে পড়ে।
সহানুভূতি: বিপদের দিনে সঙ্গীর সহানুভূতি পেতে অনেকে প্রেমে পড়ে। সুখে-দুঃখে আপন মানুষের পাশে থাকাই ‘সহানুভূতি’। মানুষ নিজের খারাপ সময় কিংবা বিপদের দিনে আরেকজনের সহানুভূতি পেতে চায়।
জৈবিক চাহিদা: মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির প্রয়োজন। জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্যই কেউ কেউ প্রেমে পড়ে। উপরে আলোচিত ‘করিম সাহেব’ জৈবিক কারণেই ম্যানেজারের প্রেমে পড়েছে।
হরমোন: একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৩ টি হরমোনের প্রভাবে মানুষ প্রেমে পড়ে। হরমোন ৩টি হলো: প্রজেস্টেরন, টেস্টোস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন। এই হরমোনগুলো মানুষের শরীরে ‘অবৈধ বাসনা’ সৃষ্টি করে।
সাধারণ ছেলেদের শরীরে টেস্টোস্টেরন নামক হরমোনের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের প্রভাব বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, বয়ঃসন্ধিকালে এই হরমোনগুলোর প্রভাব বেশি পড়ে। একারণে এই বয়সে প্রেমে পড়ার সম্ভাবনাও তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।
যেসব কারণে প্রেম করা ভালো
আমাদের প্রত্যেকের জীবন দর্শন আলাদা। অনেকেই ভাবেন পৃথিবীতে প্রেমই সব। প্রেম ছাড়া জীবন অর্থহীন। প্রেম করার বিভিন্ন খারাপ দিক থাকলেও প্রেমের কিছু ভালো দিকও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রেম রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। চলুন একনজরে দেখে নেয়া যাক যেসব কারণে প্রেম করা ভালো :
- প্রেম চিত্তবিনোদনের সুযোগ দেয়।
- দ্বায়িত্বশীল হতে শেখায়।
- ভালো লাগার অনেক মুহূর্ত উপহার দেয়।
- সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়।
- স্মার্ট হতে সাহায্য করে।
- নিজেকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপনের শিক্ষা দেয়।
- শরীর ও মন সতেজ রাখে।
- একাকিত্ব ও নির্জনতা দূর করে।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
- মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়।
- যেসব কারণে প্রেম করা খারাপ
প্রেম একটি সামাজিক ব্যাধি। দিন দিন এই ব্যাধি চরম আকার ধারণ করছে। এখন অলি-গলিতে, পাড়া-মহল্লায়, শহর-বন্দরে, স্কুল -কলেজে, গ্ৰামগঞ্জে কিংবা পার্কে কিশোর-কিশোরীদের যুগলবন্দী অবস্থায় দেখা যায়। প্রেমের অসংখ্য খারাপ দিক রয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রেমকে মানসিক রোগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। প্রেমের অন্যতম একটি খারাপ দিক হলো ‘মেয়েদের সম্ভ্রম নষ্ট হওয়া’। সমাজের প্রতিটি সেক্টরে এর মারাত্মক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। প্রেমের কারণে তালাক ও বিচ্ছেদের মতো সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনা দেখা যাচ্ছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অল্প বয়সে বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে দেশ একটি অস্বাস্থ্যকর জাতি পাচ্ছে। দেখুন যেসব কারণে প্রেম করা খারাপ :
- প্রেমের কারণে সময়ের অপচয় হয়।
- অর্থের অপচয় হয়।
- লেখাপড়ার ক্ষতি হয়।
- মেয়েদের সম্ভ্রম নষ্ট হয়।
- ক্যারিয়ার নষ্ট হয়।
- সিদ্ধান্ত গ্ৰহনে বাঁধা দেয়।
- স্বাধীনভাবে চলাফেরায় বাঁধা সৃষ্টি করে।
- যিনা’র মতো অপরাধ ঘটে।
- পরিবারের অবাধ্য হতে উৎসাহ যোগায়।
- রাত জাগার মতো বদ অভ্যাস হতে পারে।
- সংসারে অশান্তি ও বিচ্ছেদ হয়।
- প্রতারণার মতো ঘটনা ঘটে।
- মানসম্মান ক্ষুণ্ণ হয়।
এছাড়া সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়া ছাড়াও প্রেম করার আরও বিভিন্ন ধরনের খারাপ দিক রয়েছে। প্রেমের সামাজিক ক্ষতি সম্পর্কে পরবর্তীতে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।
একটি বাস্তব প্রেমের গল্প
প্রেমের কারণে সম্রাট শাহজাহান মমতাজের জন্য তাজমহল তৈরি করেছিল। তাজমহলকে ভালোবাসার নিদর্শন মনে করা হয়। আমরা যুগে যুগে ভালোবাসার এমন অসংখ্য নিদর্শন ও গল্প কথা শুনতে পাই। বাংলাদেশের বেহুলা-লখিন্দর, ভারতের দেবদাস- পার্বতীর, ইংল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া-আলবার্টের, গ্রিকের প্যারিস-হেলেনার বা শীরীন- ফারহাদের প্রেমকাহিনী আজও ভূবন বিখ্যাত হয়ে আছে। তবে আজ আমরা একটি বাস্তব প্রেমের গল্প শুনব। চলুন শুরু করা যাক…
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই গল্পটি লিপন ও নীলার (ছদ্মনাম) বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া।
নীলা লিপনকে খুব ভালোবাসে। লিপন দরিদ্র পরিবারের ছেলে। লিপনের সততা নীলাকে বারবার মুগ্ধ করে। লিপন গরিব হলেও অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করতে পছন্দ করে।
লিপন ও নীলা প্রায়ই একটা পার্কে দেখা করত। রোজকার মতো সেদিনও তারা পার্কে গল্পগুজব করছিল। এমন সময় হঠাৎ রেগে গেল নীলা।
হাতের ব্যাগটা আছাড় মেরে নীলা বললো, ব্রেকআপ !! তুমি একটা পাগল আর একটা পাগলের সাথে কোনো মানুষের সম্পর্ক থাকতে পারে না! কথাটা বলেই বাসার দিকে হাঁটতে লাগলো নীলা..
(অবশ্য এবারই প্রথমবার নয়। এর আগেও অনেকবার ব্রেকআপ হয়েছিল তাদের!)
নীলার ফেলে যাওয়া ব্যাগটা হাতে নিল লিপন। ভেতরে একটা মোবাইল, একটা লিপিস্টিক আর কিছু টাকা আছে। লিপন একবার ভাবলো নীলাকে ব্যাগের জন্য ডাক দিবে ৷ কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তাটা বাদ দিল। ব্যাগটা হাতে নিয়েই হাঁটা শুরু করলো লিপন।
দুটো বাচ্চা মেয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ইছিংবিছিং খেলছিল। লিপনের হাতে মেয়েদের ব্যাগ দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো মেয়ে দুটো। ওদের হাসি দেখে লিপনও হেসে দেয়। তবে এবার আর মেয়ে দুটো হাসে না। হয়তো লিপনকে পাগল ভাবছে!
বাসায় গিয়েই লিপনকে কে মেসেঞ্জারে নক দিল নীলা।
নীলা: তুমি আমার মোবাইলসহ ব্যাগটা চুরি করলা কেন?
লিপন: না, না আমি চুরি করিনি! তুমিই তো ব্যাগটা ফেলে আসলা।
নীলা: চুপ,একদম মুখের ওপর কথা বলবা না! কালকে আমার ব্যাগটা নিয়ে সোজা ওই পার্কে চলে আসবা। বাই!
ডাটা অফ করেই কান্না করতে লাগল নীলা! আসলে সে ইচ্ছা করেই সেখানে ব্যাগটা ফেলে এসেছে। কারণ সেদিনই ছিল লিপনের কলেজে পরীক্ষার ফিস দেয়ার শেষ দিন। ব্যাগে টাকাটা রেখে এসেছে যাতে বাধ্য হয়ে লিপন তার টাকাটা দিয়ে পরীক্ষার ফিস দিতে পারে৷ এমনিতে সরাসরি দিলে লিপন তা কোনোদিনই নিতো না! তাই বাহানা করে বাসায় চলে গিয়েছিল নীলা।
দুইঘণ্টা ধরে বসে আছে নীলা। কিন্তু লিপন আসার কোনো নামগন্ধ নেই! যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই হাঁপাতে হাঁপাতে সামনে এসে দাঁড়ায় লিপন!
লিপন: সরি, জানু! এই নাও তোমার ব্যাগ! আর একটা কথা বলবো?
নীলা: কি?
লিপন: আমি না তোমার টাকাগুলো খরচ করে ফেলেছি!
নীলার চোখে-মুখে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো! কিন্তু তা চেপে রেখে নীলা বললো, ব্যাগে তো কোনো টাকা ছিল না!
লিপন: বিশ্বাস করো ছিল! এই টাকা দিয়েই তো আমি পরীক্ষার ফিস দিয়েছি আর কাশেম চাচাকে একটা একটা লুঙ্গি কিনে দিয়েছি! আমি টিউশনির টাকাটা পেলেই তোমাকে দিয়ে দিব।
নীলার চোখ টলমল করছে! ভাবছে, যে মানুষটা নিজেই ঠিকমত চলতে পারে না, সে আবার আরেকজনকে লুঙ্গি কিনে দেয়। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে নীলা বলে, তোমাকে কলেজ থেকে বের করে দেয়নি এতেই আমি খুশি! (এরপর দুজনই হেসে দেয়)
দুই মাস এভাবেই হাঁসি-ঠাট্টা, তামাশায় ভালোই চলছিল। কিন্তু দুই মাস পর নীলার কি যেন হয়ে গেল । দুই-তিন দিন ধরে লিপনের সাথে ঠিকঠাক মতো কথাও বলছে না..
লিপন: তুমি কি ব্যস্ত?
নীলা: হুম। আম্মু আশেপাশেই আছে এখন চ্যাট করতে পারব না। যাই পরে কথা হবে। লাভ ইউ বাবু..
নীলা লিপনকে বিদায় নিয়ে অফলাইনে গেল। লিপন ভাবছে কি আর করবে সে এখন ফেসবুকে! ১ ঘন্টা ধরে ফেসবুকে বসে আছে নিউজ ফিড পাল্টাপাল্টি করছে শুধু। হুট করেই লিপন নীলার পারিবারিক আইডিতে গেল যেখানে নীলা তাকে এড করেনি সমস্যা হবে বলে। সেই আইডিতেই ঢুকে দেখল নীলার আগের প্রোফাইল পিক নেই। নতুন পিক দিয়েছে নিজের।
হুট করেই মনে হল সে তার আরেকটা আইডি থেকে নীলার সাথে এড হবে। দুদিনের মধ্যেই এড হয়ে যায় নীলার ঐ আইডিতে। ঐ আইডিতে এড হয়ে লিপনের চোখ কপালে। নীলা বলেছিল ওর সব পিক only me প্রাইভেসি দেয়া কিন্তু সব পিক ফ্রেন্ডস করা। সব লুল মার্কা ছেলেগুলো কি সুন্দর কমেন্ট করছে!
নীলা মিথ্যা বলার পরও লিপন নিরব থাকে। কিচ্ছু বলে না। নীলা ইদানিং প্রচুর ব্যস্ত। লিপনের জন্য নীলা যে আইডি খুলেছে সেখানে আসতেই পারেনা। লিপন শিওর হয় সে সারাক্ষন তার ঐ আইডিতে থাকে আর তাকে মিথ্যা বলে। নীলার সাথে আগে লিপনের প্রতিদিন কথা হতো।
এখন নীলা কথা বলতে পারেনা কারন নীলা নাকি তার মায়ের সাথে ঘুমায়। কিন্তু নীলার দুইটা এয়ারটেল নাম্বারের একটা গভীর রাত পর্যন্ত ওয়েটিং থাকে। লিপন জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে নীলা ঐ নাম্বার তার বোনকে দিছে। নীলার বোনের স্বামী নাকি প্রবাসী। লিপন প্রমাণ চায় যে ঐ নাম্বার তার বোনেরই কাছে। কিন্তু নীলার কাছ থেকে কোন জবাব আসে না, এক-দুই কথায় শুরু হয় ঝগড়া।
নীলার কথা হল লিপন তাকে আর বিশ্বাস করে না। রিলেশন না রাখার জন্য নীলা নানান কথা বলে লিপনকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে, কিন্তু কখনোই প্রমাণ দেয় না সেই নাম্বার তার কাছে নেই।
কিন্তু সেদিন লিপন দেখে নীলার সেই পারিবারিক আইডিতে ‘In a relationship with’ কেউ দিয়ে স্ট্যাটাস। লিপনের চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি আসে শুধু।
লিপন অনেক আগে থেকেই রাত জাগে, এখনও জাগে। তবে আগে লিপনের রাত জাগার সঙ্গী ছিল নীলা, আর এখন Black নামের একটা কালো সিগারেটের প্যাকেট…….
শিখনফল: সময়ের সাথে মানুষের স্বভাব চরিত্রও পরিবর্তন হতে পারে।
এরকম হাজারটা লিপন আছে যারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। শুধু লিপন নয় নীলার মতোও অনেক মেয়ে আছে যারা প্রতারিত হচ্ছে। অনেক ছেলে আছে যারা নীলার মতো মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে একসময় চম্পট দেয়। আমরা হরহামেশাই পত্রিকার পাতায় আত্মহত্যার খবর পাই। আঁচল ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সালে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ৮ মাসে বিভিন্ন কারণে ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫.২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেন।
আরও পড়ুন: প্রেমের কারণে আত্মহত্যা সংক্রান্ত প্রতিবেদন ২০২২
এই গল্প থেকে আমরা আর যা যা শিখলাম:
- মানুষের চরিত্র সবসময় পরিবর্তনশীল।
- প্রেম করার আগে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবুন।
- প্রেম মানুষকে কুপথে পরিচালিত করতে পারে।
- প্রেমে পড়ার আগে পরিবারের কথা চিন্তা করুন।
- প্রেমে ব্যর্থতা একজন মানুষকে নেশাগ্রস্ত করতে পারে।
- বিশেষজ্ঞদের মতে প্রেম করা ভালো না খারাপ
প্রেম করা ভালো না খারাপ তা জানার জন্য বিশেষজ্ঞরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেউ যখন তার প্রিয় মানুষকে দেখে তখন চোখের মাধ্যমে এর সিগন্যাল মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছায়। তখন মস্তিষ্কের ডোপামিন (মস্তিষ্কের রাসায়নিক বার্তাবাহক) এক ধরনের উদ্দীপনার সৃষ্টি করে যা সুখানুভূতি যোগায়।
এসময় এন্ডোরফিন নামে একপ্রকার হ্যাপি হরমোন নিঃসরণ হয়। মানুষের প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে এই ডোপামিন ও এন্ডোরফিন হরমোন বিশেষ ভূমিকা রাখে। ডোপামিন, এন্ডোরফিন, সেরোটোনিন ও অক্সিটোসিন এই চার হরমোনকে হ্যাপি হরমোন বলা হয়। এই হ্যাপি হরমোনগুলো নিঃসরণের কারণেই প্রেমে পড়লে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
তবে একদল বিশেষজ্ঞের দাবি, প্রেম একটি বিপজ্জনক রোগ। এটি অস্তিত্বের সংকট, হতাশা ও মনস্তাত্ত্বিক যন্ত্রণার জন্য দায়ী। ক্যালিফোর্নিয়া স্কুল ফর প্রফেশনাল সাইকোলজি (CSPP) ও অ্যালিয়ান্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ শন ডেভিস বলেন, ‘ভালোবাসা আপনার মনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং আপনাকে পাগল ও ধ্বংস করতে পারে।’
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, খারাপ স্বভাবের মানুষরা প্রেমে পড়লে হৃদরোগের সমস্যায় আক্রান্ত হয় এবং তাড়াতাড়ি মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকে। (তথ্যসূত্র: AIu)
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হ্যাপি হরমোন ছাড়াও প্রেমে পড়ার জন্য টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোন দায়ী। এই হরমোনগুলো মানুষের শরীরে অবৈধ আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে। তাই যখন খারাপ স্বভাবের মানুষ প্রেম করে তখন একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে মিলন ঘটায়, ফলে ‘এইডস’ এর মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে একাধিক গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছে প্রেম করা খারাপ।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রেম করা ভালো না খারাপ ?
মহান আল্লাহ রহমতকে একশ ভাগ করে নিরানব্বই ভাগ নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন এবং মাত্র এক ভাগ পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেছেন। এই এক ভাগের কারণেই পৃথিবীতে এতো মায়া, আবেগ আর ভালোবাসা। ইসলামে প্রেম নিষিদ্ধ নয়। আল্লাহ তায়ালা জীবপ্রেম ও দেশপ্রেমকে জায়েজ করেছেন। ইসলামে নিজের বিবাহিত স্ত্রীর সাথে প্রেম করা জায়েজ। এছাড়া ‘অবৈধ আকাঙ্ক্ষা ‘ ব্যাতিত যেকোন পবিত্র প্রেম হালাল।
তবে ইসলামি বিধান অনুযায়ী, কোন বেগানা পুরুষের সাথে বেগানা নারীর প্রেম সম্পূর্ণরুপে হারাম।আমাদের দেশে এই ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়।বিবাহ বহির্ভূত প্রেমের কারণে যিনা ও ব্যভিচারের মতো অপরাধ ঘটে। আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ‘বিবাহ বহির্ভূত প্রেম হারাম’। এই ধরনের প্রেম সমাজকে কলুষিত করছে। আল্লাহ ব্যভিচারকে শিরকের সাথে তুলনা করেছেন।
সূরা বনী ইসরাঈলের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট আচরণ।’
আল্লাহ যিনা বা ব্যভিচার করতে বারবার নিষেধ করেছেন। দুনিয়া ও আখিরাতে ব্যভিচারকারীদের জন্য চরম শাস্তি অপেক্ষা করছে।
সূরা ফুরকানের ৬৮ ও ৬৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান (শিরক) করো না, আল্লাহ প্রাণ-হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতীত তা হত্যা করো না এবং ব্যভিচার করো না। যারা এগুলো করে তারা চরম শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে তারা হীন অবস্থায় স্থায়ী হবে।’ তাই ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রেম করা খারাপ।
অবৈধ প্রেম সৃষ্টি হওয়ার কারণসমূহ
ইসলামে পবিত্র প্রেমকে হারাম করা হয়নি। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার প্রেম, দেশপ্রেম, জীবপ্রেম ইত্যাদিকে পবিত্র প্রেম বলা হয়। ইসলামে অবৈধ প্রেম হারাম। বিবাহ পূর্ব প্রেম, পরকীয়া প্রেম ইত্যাদিকে অবৈধ প্রেম বলা হয়। আমাদের দেশে বিবাহের পূর্বে পবিত্র প্রেমের কথা কল্পনাই করা যায় না। অবৈধ প্রেম সৃষ্টি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। নিচে কারণগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
- ঈমানের দূর্বলতা।
- বিবাহে দেরি।
- অবসর ও কর্মহীনতা।
- পর্দাহীনতা।
- অবাধ মেলামেশা।
- অবৈধ দৃষ্টিপাত ।
- অসৎ সংসর্গ।
- প্রযুক্তির অপব্যবহার।
- ইসলামিক শিক্ষার অভাব।
- প্রেমের সামাজিক ক্ষতিসমূহ
একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে, ‘প্রেমে সুখ সীমিত, কষ্ট অসীম’। প্রেমে লাভের চেয়ে ক্ষতি অনেক বেশি।প্রেমের সামাজিক ক্ষতিসমূহ নিচে দেয়া হলো:
১. ব্যভিচার: প্রেমের একটি অন্যতম সামাজিক ক্ষতি হলো ‘ব্যভিচার’। বিবাহ বন্ধনের পূর্বে নারী-পুরুষের অবৈধ সংসর্গকে ‘ব্যভিচার’ বলা হয়। ‘ব্যভিচার’ সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ঘটায়। ইসলামে ব্যভিচার করা মহাপাপ।
২.ভ্রূণ হত্যা: অনেক সময় অবৈধ মিলনের ফলে গর্ভে সন্তান আসে, সামাজিক স্বীকৃতি না থাকায় তখন গর্ভপাত করানো হয়, একে ভ্রূণ হত্যা বলে। দিন দিন ভ্রূণ হত্যা বেড়েই চলেছে। ভ্রূণ নষ্ট করা প্রাণ হত্যার শামিল। আখিরাতে ভ্রূণ হত্যাকারীদের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিনতর শাস্তি।
৩. তালাক: তালাক একটি সামাজিক ব্যাধি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ‘যারা দীর্ঘদিন প্রেম করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাদের বিচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।’ ২০২১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৩৭ জন তালাকের আবেদন করছে। বিবাহ বহির্ভূত প্রেমের কারণেই তালাকের হার বাড়ছে।
৪. পিতা মাতার অবাধ্যচরণ: প্রেমের আরেকটি সামাজিক ক্ষতি হচ্ছে ‘পিতা মাতার অবাধ্যচরণ’। যে পিতা-মাতা শত কষ্টের পরেও তার সন্তানকে স্নেহ-মায়া-মমতা দিয়ে লালন-পালন করে। প্রেমের কারণে সন্তান সেই পিতা-মাতার অবাধ্য হয়। পিতা-মাতার অবাধ্যচরণ আল্লাহ পছন্দ করেন না। পিতা-মাতার অমান্যকারীর পরিণতি হয় ভয়াবহ! এছাড়া প্রেম করার আরও অনেক সামাজিক ক্ষতি রয়েছে। নিচে সেগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
৫. সমকাম।
৬. হস্তমৈথুন।
৭. হত্যা
৮. আত্মহত্যা
৯. দাম্পত্যে বিশ্বাসঘাতকতা।
১০.আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন।
কিভাবে প্রেম করা থেকে বিরত থাকা যায়?
এই ডিজিটাল যুগে সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। এখন ঘরে বসেই বিশ্বের যেকোন মানুষের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব। তাই প্রেম করাও এখন আরও সহজ হয়েছে। একারণে অল্প বয়স্ক ছেলে মেয়েরা না বুঝেই বিপথে ঝাঁপ দিচ্ছে। প্রতারকরা নানান ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলছে। এমনতাবস্থায় মেয়েদের সম্ভ্রম রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এই বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মেয়েদের অবশ্যই পর্দা করতে হবে। নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। প্রেম করা থেকে বিরত থাকার উপায়গুলো নিচে দেয়া হলো:
- ঈমান মজবুত করুন।
- আল্লাহকে ভয় করুন।
- বিয়ে করুন।
- চক্ষু সংযত রাখুন।
- ধৈর্য ধরুন ।
- তওবা করুন ।
- নামাজ পড়ুন।
- রোজা রাখুন ।
- পরকালের চিন্তা করুন।
- শাস্তির কথা স্মরণ করুন।
- পরিবারকে সময় দিন।
- নিঃসঙ্গতা ত্যাগ করুন।
- নিয়মিত বই পড়ুন।
- বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে সময় কাটান।
- ভ্রমণ করুন।
শেষকথা – প্রেম করা ভালো না খারাপ?
যারা আজকের পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন তারা এতক্ষণে প্রেম করা ভালো না খারাপ জেনে গেছেন। আমরা আজকের পোস্টে প্রেমের ভালো ও খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি প্রেম করা ভালো না খারাপ এটা নিয়ে আপনার মনে আর কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। মনে রাখবেন, ‘একটি সুন্দর জীবন নষ্ট করার জন্য একটি প্রেমই যথেষ্ট।’ তাই প্রেম করে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। আপনি যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে থাকেন তাহলে বিবাহ করে নিন।পরিচিতদের জানাতে আমাদের পোস্টটি আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখুন।
FAQ
প্রেম করা হারাম নাকি হালাল?
ইসলামে বিয়ের আগে বেগানা পুরুষের সাথে বেগানা নারীর প্রেম হারাম।
প্রেম করা কি অপরাধ ?
ইসলামে অবৈধ প্রেম অপরাধ। এছাড়া কোনো নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার পর যদি কেউ প্রতারণা করে তাহলে সেটি আইনত অপরাধ।
প্রেম করে বিয়ে করা কি জায়েজ ?
ইসলামে প্রেম করে বিয়ে করা জায়েজ নয়।
কাউকে ভালো লাগলে কি করা উচিত ?
কাউকে ভালো লাগলে ধৈর্য্য ধারণ করুন। প্রাপ্তবয়স্ক হলে বিবাহ করতে পারেন।
বিয়ের উদ্দেশ্যে প্রেম করা যাবে ?
ইসলামে বিবাহ পূর্ব প্রেম হারাম। তাই বিয়ের উদ্দেশ্যে প্রেম করা যাবে না।
কখন প্রেম করা উচিত ?
বিয়ের পর নিজের স্ত্রীর সাথে প্রেম করা উচিত।