Faatiha Aayat | #বাংলাদেশ এর শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতি বছরই এত এত পরিবর্তন আনা হয় যে মাঝে মাঝে মনে হয় এটা হল #ঢাকা শহরের রাস্তার মতো। খোঁড়াখুঁড়ি যেন শেষই হয় না। এই যেমন এখন বাংলাদেশের প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের মুল্যায়নের জন্য #পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দেয়া নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, উন্নত বিশ্বের #শিক্ষা ব্যবস্থায় নাকি নম্বর বা গ্রেডিং পাওয়ার কোন ব্যাপার স্যাপার নেই, এমনকি স্কুলের ছেলেমেয়েদের কোন পরীক্ষাই নাকি নেয়া হয়না, আসুন দেখি #USA'র বাস্তবতা কী।
আমাকে দিয়ে শুরু করি। আমি এখন ক্লাশ সেভেনে পড়ি।
৫ম শ্রেণী পর্যন্ত আমি ছিলাম #NewYork সিটির এলিমেন্টারি বা প্রাইমারি লেভেলের সেরা #মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত গিফটেড অ্যান্ড ট্যালেন্টেড প্রোগ্রামের একজন গর্বিত স্টুডেন্ট।
এই প্রোগ্রামে অংশ নিতে চাইলে অবশ্যই একটা অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট বা পরীক্ষা দিতে হবে। সেই অ্যাসেসমেন্টে আবার Otis Lennon School Ability Test (#OLSAT) এবং Naglieri Nonverbal Ability Test (#NNAT) এর মত বিশ্বমানের দুটি আলাদা আলাদা পরীক্ষা দিতে হয় যেখানে অন্য অনেক কিছুর সাথে Direction & Pattern, Aural Reasoning, Arithmetic Analogy, Spatial Visualization, Logical Selection, Word Matrix, Numeric Inference এর মত বিষয়গুলোতে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হয় এই অল্প বয়সের শিক্ষার্থীদেরকেও।
এখানে আমার 2017 এবং 2019 এর দুটো #GiftedAndTalented স্কোর রিপোর্ট দেখতে পাচ্ছেন যখন আমি মাত্র ক্লাশ ওয়ান ও ক্লাশ থ্রি এর স্টুডেন্ট ছিলাম। একটাতে আমি OLSAT’এ 91 এবং NNAT’তে 99 এবং অপরটিতে OLSAT’এ 94 এবং NNAT’তে 99 পেয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ।
ক্লাশ ওয়ান থেকে সিক্স পর্যন্ত এই ছয়টি ক্লাশে প্রতি বছরে আমাকে Computational Math, Earth and Life Science, Social Studies, Civics and Career Skills, Health and Physical Education এবং Arts and Crafts এর মত কোন না কোন মূলধারার সাবজেক্টে নিয়মিত বহু পিরিয়ডিক অ্যাসেসমেন্ট ও ক্লাস টেস্ট দিতে হয়েছে।
আর এর সবকিছুই অভিভাবকেরা মনিটর করতে পারেন #গুগল ক্লাশরুমের মত নানান অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। অর্থাৎ,এদেশ শুধু নামেই #ডিজিটাল বা #স্মার্ট কান্ট্রি নয়, কাজেও তাই। যেমন, গনিতের জন্য IXL এবং Khan Academy আর বিজ্ঞানের জন্য Amplify এবং CK12 এর মত বিখ্যাত প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত স্কোরিং করা হয় আমাদের ওভারঅল পারফরম্যান্স।
এমনকি স্কুলের নিয়মত সাবজেক্ট #ইংরেজি, #গণিত, #সমাজ ও #বিজ্ঞান এর বাইরে গল্প, উপন্যাস ও নানান রকম নন-ফিকশন পড়ার জন্য এবিসি মাউস, কিডয্যানিয়া, এপিক, সোরা, ম্যাকেঞ্জি, র্যায কিডসের মত বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আমাদের #পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড অ্যাকসেস থাকে এবং সেখানে কী কী বই কত ঘণ্টা পড়লাম তার উপড়েও স্কোরিং করা হয়। একজন স্টুডেন্ট রিডিংয়ে কতটা ভালো তা ইংরেজি অ্যালফাবেট অনুসারে লেভেলিং করা হয়। আমি অলরেডি রিডিং এর সর্বোচ্চ লেভেল “জেড”এ আছি।
বাংলাদেশে যেরকম একসময় সারা বছরে তিনটা ধাপে প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক ও সবশেষে বার্ষিক পরীক্ষা হত আমাদেরও সেরকম সারা বছরে রয়েছে তিনটা ধাপ। যেগুলোকে বলা হয় ফার্স্ট, সেকেন্ড এবং থার্ড মার্কিং পিরিয়ড। এই যেমন এখন দেখতে পাচ্ছেন আমার ক্লাশ সেভেন এর এখন পর্যন্ত সম্পন্ন ফার্স্ট মার্কিং পিরিয়ডের আর ক্লাশ সিক্সের সারা বছরের #ইভালুয়েশন যার দুটোতেই আমার #এভারেজ ৯৮ থেকে ১০০।
আর এটা আমার ক্লাশ ফাইভের #রিপোর্ট কার্ড যেখানে আমি সবগুলো সাবজেক্টে সর্বোচ্চ প্রফিসিয়েন্সি লেভেল “ফোর” পেয়েছি যেটাকে বলা হয় "এক্সেলস ইন স্ট্যান্ডার্ডস"।
এতো গেল স্কুলের পরীক্ষা। #আমেরিকা যেহেতু ৫০টি আলাদা অঙ্গরাজ্য বা স্টেট নিয়ে গঠিত একটি ফেডারেল কান্ট্রি, তাই এখানে প্রতিটি ষ্টেটের রয়েছে নিজস্ব পরীক্ষা পদ্ধতি। এগুলোকে আমরা বলি স্টেট টেস্ট এবং প্রতি বছরই আমাদের এই পরীক্ষা দিতে হয়।
এই যেমন আমি ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ৫ম শ্রেণী থেকে #নিউইয়র্ক স্টেট টেস্ট এর দুটো সাবজেক্টেই - ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ আর্টস (ELA) এবং কম্পিউটেশনাল ম্যাথ (Math) - সর্বোচ্চ স্কোর, সর্বোচ্চ স্টেট লেভেল, সর্বোচ্চ প্রফিসিয়েন্সি রেটিং এবং নিউ ইয়র্ক সিটি পার্সেন্টাইল রেন্জের সর্বোচ্চ কোয়ার্টার পেয়েছি। #আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে নিউইয়র্ক স্টেট টেস্ট এর দুটো সাবজেক্টেই সর্বোচ্চ লেভেল এবং সর্বোচ্চ পার্সেন্টাইলে পেলেও সর্বোচ্চ স্কোর এবং সর্বোচ্চ রেটিং শুধু ম্যাথ’এ পেয়েছি, ELA’তে পাইনি।
এতক্ষণ আমার ক্লাশ সেভেন পর্যন্ত বিভিন্ন এক্সাম দেয়া ও নম্বর প্রাপ্তির কথা বললাম। ক্লাস নাইন থেকে টুয়েল্ভ পর্যন্ত আমাকে দিতে হবে স্পেশালাইজড হাই স্কুল অ্যাডমিশন টেস্ট, রিজেন্ট এক্সামস, কলেজ এন্ট্রান্স এক্সামস এবং অ্যাডভানস প্লেসমণ্টে এক্সাম।
এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের #রাষ্ট্রপতি'র পক্ষ থেকে প্রত্যেক বছর #এলিমেন্টারি, #মিডল এবং #হাইস্কুল এর গ্রাজুয়েটিং স্টুডেন্টদের অর্থাৎ পঞ্চম, অষ্টম ও দ্বাদশ শ্রেণীতে অসামান্য প্রতিভার সম্মাননা ও স্বীকৃতি হিসেবে দুটি পুরষ্কার দেয়া হয় –
(১) প্রেসিডেন্ট’স অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্স – গোল্ড সার্টিফিকেট
(২) প্রেসিডেন্ট’স অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাকাডেমিক এচিভমেন্ট – সিলভার সার্টিফিকেট
আলহামদুলিল্লাহ, আমি গতবছর এলিমেন্টারি গ্রাজুয়েট হিসেবে “প্রেসিডেন্ট’স অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্স - গোল্ড সার্টিফিকেট” পেয়েছি। সাথে পেয়েছি #প্রেসিডেন্ট এর নিকট থেকে চিঠি।
এবার আপনারাই বলেন, যারা বলে উন্নত বিশ্বে স্কুলে পরীক্ষা ব্যাবস্থা নেই তারা কি #সত্য ও #সঠিক বলে?